নিজস্ব প্রতিনিধি:
পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, তারা পদত্যাগের বিষয়ে মনস্থির করেছেন। রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়ার জন্য ইসি সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন।
তবে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে তারা পদত্যাগপত্রে সই করে সচিবের কাছে জমাও দিয়েছেন।
সৌজন্য বিনিময়ে অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে ব্রিগেডিয়ার (অব.) আহসান হাবীব খান ও মোহাম্মদ আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। তবে কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা ও আনিছুর রহমান উপস্থিত ছিলেন না। তবে এসময় তারা নির্বাচন ভবনেই তাদের নিজ দফতরে উপস্থিত ছিলেন। অনুপস্থিত ২ কমিশনারও পদত্যাগ করেছেন কিনা জানতে চাইলে সিইসি তার কোনও জবাব দেননি।
এসময় ‘বিদায়ী ব্রিফিং’ নামে একটি দীর্ঘ লিখিত বক্তব্য পেশ করেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। এসময় তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনও জবাব দেননি তিনি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার বক্তব্যে, বাংলাদেশের অতীত নির্বাচনের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। কোনও নির্বাচন-ই ‘বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না’ বলেও দাবি করেন তিনি।
সিইসি তার বক্তব্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রেক্ষাপটও তুলে ধরেন। সেইসঙ্গে নির্বাচন কমিশন সংস্কারের কিছু প্রস্তাবনাও তুলে ধরে তিনি বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে উদ্দেশ্য অর্জন আরও সু-নিশ্চিত হবে।
এদিকে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনে আজও বিক্ষোভ করছেন একদল লোক। গতকাল বুধবারও ‘১৭ বছর ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত নাগরিক সমাজে’-এর ব্যানারে নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগসহ নির্বাচন কমিশন সংস্কারের দাবিতে ইসি সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভবন প্রাঙ্গণে বিপুল সংখ্যক সেনাসদস্য সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময়ের পরপরই কোনও প্রটোকল ছাড়াই ব্যক্তিগত গাড়িতে করে নির্বাচন ভবন ত্যাগ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এর কিছুক্ষণ পর রাশেদা সুলতানা, মোহাম্মদ আলমগীর ও আনিছুর রহমানও নির্বাচন ভবন ত্যাগ করেন।
এসময় সদ্য সাবেক কমিশনার আনিছুর রহমানের গাড়ি লক্ষ্য করে বিক্ষুব্ধ জনতা জুতা ছুঁড়ে মেরেছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। এছাড়া নির্বাচন ভবনের গেটেও কমিশনারদের গাড়ি লক্ষ্য করে জুতা ছুঁড়তে দেখা গেছে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (পৌনে ১টা) নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান তার দফতরে অবস্থান করছেন।
হাবিবুল আউয়াল কমিশনের আড়াই বছর
২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দেশের ত্রয়োদশ সিইসি হিসেবে নিয়োগ পান সাবেক আমলা হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন এই কমিশন। তাদের পরিচালনায় ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়। এছাড়া এই আড়াই বছরে দেড় সহস্রাধিক পদে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচন-উপনির্বাচন করেছেন তারা।
২০২২ সালে নতুন কমিশন গঠনের আগে আকস্মিকভাবেই আইন প্রণয়ন হয়, আর সেই আইনের অধীনে প্রথম নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নেন কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ পাঁচ জন।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংস্কারের দাবি উঠেছে। সংস্কারের প্রতিশ্রুতির মধ্যে পদত্যাগের হিড়িক চলছে।
দেশের অন্যতম প্রধান বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ ইসিতে নিবন্ধিত বেশিরভাগ দল হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশনকে মেনে নেয়নি। ইসির সংলাপের আহ্বানও প্রত্যাখ্যান করেছিল বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল ও জোট। এই কমিশনের আমলে গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও বর্জন করে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল। শুধু আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্র দলগুলো ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। জাতীয় নির্বাচনের আগে নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেওয়া, বিতর্কিত বিভিন্ন সংস্থাকে পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে অনুমোদন দেওয়া, আইনে নিজেদের ক্ষমতা খর্ব করার প্রস্তাব দেওয়া, ইভিএম ব্যবহার নিয়ে সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর দেওয়া মত পাল্টানোসহ কমিশনের নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।