সংবাদ শিরোনাম:

আপনি কি সন্তানের বিষয়ে অতিরিক্ত সচেতন?

Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

লাইফস্টাইল ডেস্ক:

বাবা-মা মাত্রই সন্তানের প্রতি যত্নশীল। সন্তানের ভালোমন্দ বোঝা, তার বিষয়ে সতর্ক থাকা এবং প্রতিরক্ষামূলক আচরণ করা বাবা-মায়ের জন্য খুবই স্বাভাবিক। তবে মাত্রাতিরিক্ত কোনও কিছুই ভালো নয়। সন্তানের প্রতি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল থাকা, সন্তানের সবকিছুতে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা কিংবা ওভার প্রটেক্টিভ হওয়া কিন্তু সন্তানের জন্য ভালো ফল বয়ে আনে না। বাবা মায়ের উপর অতিমাত্রায় মানসিক বা মনস্তাত্ত্বিক নির্ভরতা সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য খারাপ।
আপনি ওভার প্রটেক্টিভ বাবা মা কিনা কীভাবে বুঝবেন? ধরুন আপনি আপনার সন্তানকে কোনও কিছু নিয়েই লড়াই বা সংগ্রাম করতে দিতে চান না। আপনি সন্তানের ছোটখাট সব বিষয়েও নাক গলান এবং নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন। আপনি কথায় কথায় তাদের ভুল ধরেন এবং সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাদের ছোট ভুলেও আপনি রিঅ্যাক্ট করেন বা বকাঝকা করেন। সন্তানের সিদ্ধান্ত নিয়ে কটাক্ষ করেন এবং সেটা মেনে নেন না। আপনার কথা মেনে নেওয়ার জন্য সন্তানকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করেন। এই আচরণগুলো যদি আপনার সাথে মিলে যায়, তবে আপনি সন্তানকে বড় করছেন আপনার নিজস্ব নিরাপত্তা বলয়ের ভেতর।
সন্তানদের অতি সুরক্ষিত রাখলে তাদের সঠিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। ন্যাশনাল কলেজ অব হোম ইকোনমিক্সের শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগের প্রভাষক ফারিহা রহমান জানান, সারাক্ষণ সুরক্ষিত অবস্থায় থাকতে থাকতে নিজেদের ভেতর জড়তা তৈরি হয় এ ধরনের শিশুর মধ্যে। পরবর্তীতে যেকোনো পরিবেশে খাপ খাওয়াতে সমস্যা হয় তাদের। তারা সহজে মিশতে পারে না অন্যদের সঙ্গে। আত্নবিশ্বাসের জায়গা থেকেও তৈরি হয় ঘাটতি। তারা আত্ননির্ভরশীল হতে পারে না। এর কারণ হলো সারাক্ষণ বাবা-মাকেই তারা জীবনের মানক হিসেবে দেখে ও বোঝে। ফলে নিজস্বতা বা নিজের চয়েজ তৈরি হয় না। সব কিছুর জন্যই বাবা-মায়ের উপর তারা নির্ভর করতে থাকে। নিরাপত্তা বলয়ে থাকতে থাকতে তারা দুঃখ, কষ্ট মোকাবিলা করে বড় হতে শেখে না।
অনেক সময় দেখা যায় শিশুরা কোনও কাজ করতে পারছে না বলে তৎক্ষণাৎ বাবা-মা কাজটি করে দিচ্ছেন। এতে শিশু প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে শেখে না। ফলে ভবিষ্যতে গিয়ে ছোট ছোট বিপদেই ঘাবড়ে যায় এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সবসময় ছোটখাট বিষয়ে খুঁতখুঁত করার কারণে অনেক সময় বাবা-মায়ের উপর থেকে ভরসা হারিয়ে ফেলে সন্তান। বিশেষ করে কৈশোরকালীন সময়ে। এতে সম্পর্কে চলে আসে তিক্ততা। তারা অতিরিক্ত সচেতন বাবা-মাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে।
ডাক্তার কাজী তাসনুভা তারান্নুম জানান, সন্তানকে নিতে অতি মাত্রায় সচেতন থাকলে সেটার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তাদের স্বাস্থ্যের উপরেও। অনেক বাবা-মা সন্তানকে নিয়ে সহজে বাইরে বের হতে চান না। বাইরে রোদ, গরম, শীত বা বৃষ্টি- এমন অজুহাত দেখিয়ে সারাক্ষণ ঘরেই রাখেন। এতে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে না। ফলে অল্পতেই শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে।
শিশুকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় বড় করলে এক সময় সেটাই তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। তারা বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে খেয় হারিয়ে ফেলে। অন্যদের সামনে নিজেকে ছোট ও দুর্বল মনে করে। ফারিহা রহমান বলেন, একটি শিশুকে নিজেদের পর্যাপ্ত শাসনে রেখে বাকিটুকু ছেড়ে দিতে হবে। শিশু যেন নিজেই দেখে এক্সপ্লোর করে শেখে। এতে ভবিষ্যৎ জীবনে তাদের জন্য বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া তাদের জন্য সহজ হয়। শিশুদের বিষয়ে সচেতনতা ভালো, কিন্তু অতিরিক্ত কিছু কখনোই মঙ্গল নয়। সন্তানকে নতুন নতুন বিষয় শিখতে দিন। তাদেরকে ব্যর্থতা থেকে বাঁচানোর চেষ্টা না করে সেটার মুখোমুখি হতে দিন। হারতেই হারতেই একসময় জিতে যাওয়ার পথ তৈরি করবে তারা।

Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *