নিজস্ব প্রতিনিধি:
মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রর দ্বিতীয় ইউনিটের পরীক্ষামূলক উৎপাদন সফল হয়েছে। ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টারের (এনএলডিসি) চাহিদা মতো ইউনিটটি ৬০০ মেগাওয়াটের পূর্ণ ক্ষমতায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে। অন্যদিকে মহেশখালীতে টেস্টিং কমিশনিং শেষ হয়েছে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টার্মিনালের। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের বড় দুই প্রকল্প ঘিরে এই এলাকার মানুষ উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছে।
মহেশখালীর বাসিন্দা আব্দুল জলিল মিয়া জানান, একসময় এখানে লবণ চাষ হতো। এখনও বেশিরভাগ জমিতে লবণের চাষ হয়। সেই লবণ চাষ করে খুব একটা ভালো চলে না তাদের। তিনি বলছিলেন, একশ্রেণির মহাজনরা এখানে বিনিয়োগ করেন। তারা কেবল লবণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। বিদ্যুৎকেন্দ্র, সমুদ্রবন্দর হলে এখানে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এতে তাদের জীবন বদলে যাবে বলে তিনি স্বপ্ন দেখছেন।
মহেশখালী স্পিডবোট ঘাটে অনেক দিন ধরেই কাজ করছেন আব্দুল কালাম। তিনি বলছিলেন, সাগরের সঙ্গে যুদ্ধ করেই তাদের প্রতিদিন চলতে হয়। বিকল্প কোনও ব্যবস্থা থাকলে বা পেশা পরিবর্তনের সুযোগ থাকলে তিনি অবশ্যই সেই চিন্তা করতেন। মাতারবাড়িতে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। সেখানে একটি রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল গড়ে উঠলে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এখন তাদের এলাকার প্রায় সব মানুষ চিন্তা করছেন, এ ধরনের প্রকল্প তাদের জীবন বদলে দেবে।
মাতারবাড়িতে সরকার বিদ্যুৎকেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর, স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করছে। এর বাইরে সেখানে একটি রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল গড়ে উঠবে। সব কিছু মিলিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে মাতারবাড়ি কেবল এই অঞ্চলের ভাগ্যই বদলে দেবে তা নয়। বরং দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থানকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে।
ইতোমধ্যে মাতারবাড়ি মহেশখালীর উন্নয়ন প্রকল্পে চীন ও জাপান বিনিয়োগ করছে। মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং গভীর সমুদ্রবন্দরের চ্যানেল খননে ঋণ দিয়েছে জাপান কোঅপারেশন এজেন্সি-জাইকা। অন্যদিকে চীনের এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টার্মিনাল।
মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে ১৮ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফট থাকায় এখন ৮০ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার কয়লার জাহাজ নোঙর করতে পারে। দেশের অন্য কোনও বন্দরে এই গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারে না। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরটির মাধ্যমে বাংলাদেশের অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্র তো বটেই, ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোও বন্দরটি ব্যবহার করতে পারবে।
কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য দ্বিতীয় ইউনিটকে প্রস্তুত করছি। দ্বিতীয় ইউনিট থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। অন্য ইউনিট চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এখানে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করলেও এখানে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির সঙ্গে মুনাফা ভাগাভাগি করবে। এজন্য ইতোমধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কাজ শুরু করা হয়েছে।
সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং বয়াটি কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার মহেশখালী দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে সমুদ্রের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। মুরিংটি ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের দুটি পৃথক পাইপলাইনের মাধ্যমে মহেশখালী এলাকায় নির্মিত স্টোরেজ ট্যাংক টার্মিনালের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে। আমদানি করা অপরিশোধিত তেল এবং ডিজেল পরিবহনকারী জাহাজ থেকে পাম্প করে পাইপলাইনের মাধ্যমে স্টোরেজ ট্যাংকগুলোতে জমা করা হবে। পরবর্তী সময়ে স্টোরেজ ট্যাংক থেকে পাম্প করে ক্রুড অয়েল ১৮ ইঞ্চি ব্যাসের অপর দুটি পৃথক পাইপলাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রামে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডে পাঠানো হয়।
সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টার্মিনালের প্রকল্প পরিচালক শরিফ হাসনাত বলেন, ইতোমধ্যে প্রকল্পটির সব কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পটির কমিশনিং হয়েছে। এখন এটি দিয়ে তেল খালাস করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সাগরের অনেক নিচ দিয়ে পাইপলাইনটি নির্মাণ করা হয়েছে। আমাদের জন্য এই অভিজ্ঞতা একেবারেই নতুন ছিল।