সংবাদ শিরোনাম:

এক পরিবারের ৮ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী,৪ বছর ধরে ঘুরছে অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণের আশায়

Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print
image_pdfMake PDFimage_printPrint It

মোঃ ফারুক আহম্মেদ মোল্লা, স্টাফ রিপোর্টার :

শরীয়তপুরের জাজিরায় ‘শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী’তে জমি দিয়েও অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণের চেক পাচ্ছে না দৃষ্টিহীন সিরাজ মাদবরের পরিবার। এক পরিবারের ৮ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, ৪ বছর ধরে ক্ষতিপূরণের আশায় ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে।

অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় দালালকে টাকা দিতে না পারায় মামলার জটিলতায় ৪ বছর ঘুরেও জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে চেক পাচ্ছেন না অসহায় পরিবারটি। চেক না পেয়ে পরিবারের ৮ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক বরাবর জমির ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। তবে বিষয়টি তদন্ত করে সহায়তার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়, ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয়  সূত্রে জানা যায়, জমির কাগজপত্রের ফাইল হাতে নিয়ে গত ৪ বছর যাবৎ জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও আম্রকাননে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরছেন উপজেলার নাওডোবা ইউনিয়নের হাজি গয়জুদ্দিন ঢালীকান্দি এলাকার সিরাজ মাদবর। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা মৌজা ও মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর মৌজায় মোট ১১৯ দশমিক ৭৩ একর জমি ‘শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী’ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করে সরকার। যা ২০১৮-২০১৯ সালে ৬ নম্বর এলএ কেস সম্পূর্ণ হয়। সেই অধিগ্রহণে জাজিরা ১০১ নম্বর নাওডোবা মৌজায় বিআরএস ২০, ২৯ নম্বর খতিয়ানের ২৪১৬, ২৪৬৮ দাগে ৬৬ দশমিক ৭ শতাংশ জমি ভাগে আসে সিরাজ মাদবরের পরিবারের। ২০২০-২০২১ সালে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ২৮০ নম্বরে মিসকেস সম্পূর্ণ করে প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ টাকার চেক হয় সিরাজ মাদবরের নামে। কিন্তু এর আগে স্থানীয় দালাল ইলিয়াস মাদবরের বাবা ইব্রাহিম মাদবর ২০১৪ সালে শরীয়তপুরের চিকন্দি আদালতে ৯৪ জনের নামে দেওয়ানি মামলা করেন। সেই মামলায় দালালকে টাকা দিয়ে স্থানীয় ইয়ারুন নেছা, ইউনুছ বেপারী, মজিবর মাদবর, আজিদ মাদবর, জালাল মাদবর, হারুন অর রশিদ, ফারুক হোসেনসহ বেশ কয়েকজন চেক উত্তোলন করতে পারলেও ৪ বছর যাবৎ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ধরনা দিয়েও চেক পাচ্ছেন না সিরাজ মাদবর। সিরাজের অভিযোগ, মামলায় তার নাম থাকলেও দালাল ইলিয়াস মাদবরকে ১৪ লাখ টাকা দিতে না পারায় চেক তুলতে পারছেন না। চেক না পাওয়ায় সিরাজ মাদবরসহ তার স্ত্রী সেলিনা বেগম, ছেলে স্বাধীন মাদবর, ইমামুল মাদবর, বোন সোনা মালা বেগম, ঝরনা আক্তার, জয়বুন নেছা ও ভাগ্নি রত্না আক্তারের চোখের চিকিৎসা থমকে আছে।

হাজি গয়জুদ্দিন ঢালীকান্দি এলাকার ভুক্তভোগী দৃষ্টিহীন সিরাজ মাদবর বলেন, ৪ বছর ধরে চেকটির জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয়সহ বিভিন্ন দ্বারে ঘুরছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমার চেক পাচ্ছি না। স্থানীয় দালাল ইলিয়াস মাদবর ১৪ লাখ টাকা চায়, দিতে না পারায় আমার চেকটি আটকে আছে। চেকটি না পেলে পরিবারের ৮ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর চিকিৎসাসহ সংসার চালানো সম্ভব হবে না।

একই দাগে জমির মামলায় চেক পাওয়া স্থানীয় নারী ইয়ারুন নেছা বলেন, দালাল ইলিয়াসের পরিবারকে দুই লাখ টাকা দিয়ে আমি জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে চেক পেয়েছি। কিন্তু সিরাজ দালালকে টাকা দিতে না পারায়, চেক পায়নাই।

জাজিরা উপজেলার নাওডোবার অভিযুক্ত দালাল ইলিয়াস মাদবর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ২০১৪ সালে আমরা ৯৪ জনের নামে আদালতে একটি দেওয়ানি মামলা করেছি। যেটা ইনজাংশন জারি করা। কিন্তু ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে অনেকেই মামলা করা জমির চেক উঠিয়ে নিয়েছে। মামলা যেহেতু চলমান, নিষ্পত্তি হলে যে চেক পাবে, সে নেবে বলে দাবি তার।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন শরীয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান বলেন, জেনেছি জনৈক সিরাজ মাদবরের জমি ‘শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী’ প্রকল্পের অধিগ্রহণ করে নিয়েছে। অধিগ্রহণের পর তার চেক পাওয়ার জন্য গত ৪ বছর যাবৎ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ধরনা দিচ্ছেন, বিভিন্ন মানুষের কাছে যাচ্ছেন। কিন্তু তিনি চেকটা পাচ্ছেন না। যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। জেলা প্রশাসকসহ যারা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আছেন তারা এই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর পাশে দাঁড়াবেন এটাই আমার চাওয়া।

শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, সুস্পষ্ট প্রমাণ দরকার, কীভাবে একই মামলায় অন্যরা চেক পেল! বাদী ক্লিয়ারেন্স দিয়েছেন বলে অন্যরা চেক তুলে নিতে পারবেন, এটা তো হওয়ার কথা না। যেহেতু ওই পরিবারে ৮ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তাই বিষয়টি তদন্ত করে ওই পরিবারকে সহায়তা করা হবে।

image_pdfMake PDFimage_printPrint It
Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *