ক্রীড়া ডেস্ক:
গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশ দল এখন পর্যন্ত কোন টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেনি। সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াডের তিন ক্রিকেটারকে বাইরে রেখে ভারত সিরিজের দল ঘোষণা করেছে নির্বাচক প্যানেল। তাদের মধ্যে সাকিব আল হাসান টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেওয়ায় দলে নেই। অন্যদিকে, সৌম্য সরকার ও তানভীর আহমেদ বাদ পড়েছেন। সৌম্যর জায়গায় সুযোগ পেয়েছেন ইমন। বিপরীতে টিকে গেছেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মূলত অভিজ্ঞতার কারণেই তাকে ভারতের বিপক্ষে কুড়ি ওভারের সিরিজে স্কোয়াডে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সৌম্য দুই ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ০ ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ফেরেন ১০ রানে। তার বাদ পড়ার কারণ কেবল বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স নয়, তার প্রতিপক্ষ পারভেজ হোসেন ইমনও দারুণ ছন্দে আছেন। টাইগার্স ক্যাম্পে নিজেদের মধ্যে প্রস্তুতি ম্যাচে তার ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ হয়েছেন নির্বাচকেরা। সর্বশেষ বিপিএলে কয়েকটি ইনিংসে দারুণ ব্যাটিং করেছেন। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও তার পারফরম্যান্স ছিল দারুণ।
২০২২ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক পারভেজ হোসেন ইমনের। তারপর ২০২৩ সালের অক্টোবরে চীনের হাংঝুতে এশিয়ান গেমসে খেলে জাতীয় দলে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। অবশেষে লম্বা বিরতির পর ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে স্কোয়াডে সুযোগ পেয়েছেন যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের এই ক্রিকেটার। সৌম্যর বাদ পড়া এবং তার জায়গায় ঈমনের সুযোগ পাওয়া নিয়ে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বলেছেন, ‘ব্যাটিংয়ে লিটন আছে, তামিমও (তানজিদ হাসান তামিম) আছে। সৌম্যর জায়গায় ইমনকে চেষ্টা করে দেখতে চাই। বিশ্বকাপের আগেও ট্রেনিং সেশনে রেখেছিলাম, পর্যবেক্ষণ করেছি। টাইগার্স ক্যাম্পে বেশ ভালো ট্রেনিং করেছে। আমাদের মনে হয়েছে, ভবিষ্যৎ ভাবনার প্রাথমিক পদযাত্রায় তাকে দলে শামিল করতে চাই।’
নতুনদের সুযোগ করে দিতে রবীন্দ্র জাদেজা, বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বকাপেই। বাংলাদেশের সাকিবও কয়েকদিন আগেই কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপে নিজের শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এমন অবস্থায় ভারতের বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহর স্কোয়াডে থাকা ভক্তমহলে প্রশ্ন তৈরি করেছে। মাহমুদউল্লাহর অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়ক বলেছেন, ‘অভিজ্ঞতাকে আমরা ছেড়ে দিচ্ছি না, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এই দলে আছেন, প্রয়োজনে তিনিও যাতে দলের হাল ধরতে পারেন সেই ব্যবস্থাটা রাখছি।আমাদের তার ওপর আস্থা আছে, ক্যাপ্টেনের কাছে সব রকম কম্বিনেশনেরই একটা অপশন এই দলের ভেতর পাবেন।’
ইমনের মতো অনেকদিন পর ফিরেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। গত বছরের জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন অফস্পিনিং এই অলরাউন্ডার। সাকিবের জায়গায় মিরাজকে সুযোগ দেওয়া নিয়ে লিপু বলেছেন, ‘দ্য গ্রেট সাকিব আল হাসান ঘোষণা করেছেন নিজের শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। তার যে অভিজ্ঞতা ও পারফরম্যান্স, তার কাছাকাছি স্থলাভিষিক্ত এ মুহূর্তে না থাকলেও ব্যাটিংয়ে যিনি তার কাজ ভালোভাবে সামাল দিতে পারেন, সেরকম স্থলাভিষিক্ত মেহেদী মিরাজ। বিশেষ করে ভাবছি ব্যাটিংয়েই বেশি অবদান রাখতে পারবে। ভালো অফ স্পিনও করে।’
সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিরাজকে স্কোয়াডে না নেওয়া নিয়েও ব্যাখ্যা দিয়েছেন লিপু, ‘বিশ্বকাপ দলে সম্পৃক্ত করিনি তার মূল কারণ ছিল আমরা টেস্ট ও ওয়ানডেতে তার ব্যাটিং-বোলিং গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেছিলাম, যাতে টি-টোয়েন্টির আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ভূমিকা না ফেলে বা বোলিংয়ে প্রথম পাওয়ার প্লের জন্য ভালো অপশন মনে করিনি। তার প্রচলিত বোলিং, অ্যাকশন এসবে যেন বিঘ্ন না ঘটে। অনেক সময় টি-টোয়েন্টিতে ভালো বলও ছক্কা হয়ে যায়। এটাই অন্যতম কারণ ছিল। যারা ভাবছেন কেন তাকে বিশ্বকাপ দলে রাখা হয়নি। এই ইস্যুতে মিরাজের সঙ্গে আমাদের স্পষ্টভাবে কথা হয়েছে।’
মিরাজ ব্যাটিং অর্ডারে কমপ্লিট প্যাকেজ। যে কোন পজিশনে মিরাজকে অধিনায়ক ব্যবহার করতে পারেন। মেইকশিফট ওপেনার থেকে শুরু করে বিভিন্ন পজিশনে মিরাজের ব্যাটিং করার সামর্থ্য রয়েছে। টি-টোয়েন্টিতে মিরাজকে ওপরের দিকে খেলানো হবে বলে জানালেন লিপু, ‘তিনি (মিরাজ) যেখানে ব্যাটিং করবেন, সেখানে টি-টোয়েন্টিতে যেন আরও কিছু বল পান খেলার, ফিনিশারের ভূমিকায় না গিয়ে আরেকটু ওপরে তাকে আমরা দেখতে চাই।’