সংবাদ শিরোনাম:

৭৭ বছর পর ট্রেন যাবে কলকাতায়, রাজশাহীতে উচ্ছ্বাস

Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

রাজশাহী প্রতিনিধি:

৭৭ বছর আবারও চালু হচ্ছে রাজশাহী থেকে কলকাতা রুটে ট্রেন সার্ভিস। শনিবার (২২ জুন) বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এদিন দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে মোট ১৩টি উদ্যোগের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রাজশাহী ও কলকাতার মধ্যে ট্রেন সার্ভিস চালু অন্যতম।
এদিকে ট্রেন চালুর খবরে এরই মধ্যে রাজশাহীসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁর অধিবাসীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। এসব অঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ মনে করছেন, রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের সুবিধা ছাড়াও রাজশাহীর সঙ্গে ভারতে যোগাযোগের নতুন মেলবন্ধন তৈরি হবে। এতে করে রাজশাহী অঞ্চলের অর্থনীতিতে গতি আসবে। রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন চালু হলে ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানের সঙ্গেও রাজশাহীর যোগাযোগের গুরুত্ব বাড়বে। তখন রাজশাহী ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু হবে।
এছাড়া রাজশাহী অঞ্চলের ভারতগামী মানুষের দুর্ভোগ কমবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলবন্দর দিয়ে বর্তমানে ভারতের সঙ্গে পণ্যবাহী ট্রেন যোগাযোগ চালু রয়েছে। এজন্য দুই দেশের রেলপথও সংস্কার করা হয়েছে। নেপাল এরইমধ্যে রাজশাহী রুট দিয়ে বাংলাদেশ থেকে সারও আমদানি করেছে।
জানা গেছে, অবিভক্ত বাংলায় ভারতের মালদহ ও মুর্শিদাবাদ হয়ে রেলপথে কলকাতার সাথে রাজশাহীর যোগাযোগ ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান পৃথক রাষ্ট্র গঠনের পর সেই যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তবে চিকিৎসা ও ভ্রমণসহ নানা কারণে রাজশাহী অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক মানুষ ভারত যাচ্ছে। রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন চালুর গুরুত্ব অনেক আগে থেকেই ছিল। তাই ঢাকা-কলকাতা এবং খুলনা-কলকাতার পর রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন চালুর গুরুত্ব বেড়েছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী-কলকাতা ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতের সিঙ্গাবাদ, মালদহ, ফারাক্কা, কাটোয়া, খাগড়াঘাট হয়ে কলকাতার হাওড়ায় রেলস্টেশনে পৌঁছাবে। এ রুটে কলকাতা যেতে ৪২৫ কিলোমিটার পথ দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে। সময় লাগবে প্রায় ১১ ঘণ্টা। গেদে সীমান্ত দিয়ে ২১৫ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে কলকাতা যেতে সময় লাগবে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা। তবে এখনও ট্রেনের রুট ঠিক হয়নি। এ নিয়ে দুই দেশের রেল কর্মকর্তাদের বসতে হবে।
এদিকে রাজশাহী থেকে কলকাতা ট্রেন চালু দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এই অঞ্চলের মানুষের। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নির্বাচনি ইশতেহারেও রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন চালুর প্রসঙ্গটি উল্লেখ ছিল। এবার সেই প্রতিশ্রুতিও পূরণ হলো।
শনিবার (২২ জুন) ভারতের নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের পর এ ঘোষণা আসে। ঘোষণার পরই উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে রাজশাহীতে। দীর্ঘদিনের এ চাওয়া পূরণ হতে যাওয়ায় খুশি রাজশাহীর মানুষ। দ্রুতই এ পথে ট্রেন চালু হবে এমন আশা করছেন তারা।
রাজশাহী অঞ্চল থেকে এখন প্রতিদিনই শত শত রোগী চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। আত্মীয়তার কারণেও প্রতিদিন অনেক মানুষ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যান। আমদানি-রফতানির ব্যবসায়ীদেরও কলকাতাসহ বিভিন্ন রাজ্যে যেতে হয়। সরাসরি ট্রেন চালু হলে সবার দুর্ভোগ আর ভোগান্তি কমে যাবে। তাই প্রতিশ্রুত ট্রেন দ্রুতই চালুর দাবি জানিয়েছেন রাজশাহীর বিশিষ্টজনেরা। নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি পূরণ হওয়ায় রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছাও জানিয়েছে রাজশাহীর ব্যবসায়ী, সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতারা।
রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন চলাচল চালু করতে দীর্ঘদিন থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তার ২০১৮ ও ২০২৩ সালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল। ২০২৩ সালের নির্বাচনি ইশতেহারের ‘শিল্প-বাণিজ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো উন্নয়ন’ খাতের ৬ নম্বরে রাজশাহী টু কলকাতা ট্রেন ও রাজশাহী টু কলকাতা বিমান এবং রাজশাহী টু কলকাতা সরাসরি বাস সার্ভিস চালু করা হবে।’ এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারের ৭ এর (খ) নম্বর পয়েন্টে লেখা ছিল ‘রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন সার্ভিস চালু করা’।
রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন চলাচল চালু করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত ও মৌখিকভাবে বারবার দাবি জানিয়েছেন রাসিক মেয়র। এছাড়া রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন চলাচল চালুর গুরুত্ব তুলে ধরে রেলমন্ত্রীকে কয়েকবার চিঠি দিয়েছেন তিনি। সর্বশেষ গত ১০ মে ২০২৪ তারিখে রেলমন্ত্রী জিল্লুর হাকিম রাজশাহী সফরে আসলে রাজশাহী-কলকাতা সরাসরি ট্রেন ও বিমান চালুর দাবি সম্বলিত ডিও লেটার প্রদান করেন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, রাজশাহী-কলকাতা সরাসরি ট্রেন চালুর জন্য আমরা বিভিন্ন সময় দাবি জানিয়েছি। অবশেষে এই ট্রেন চালু হতে যাচ্ছে। সরকারপ্রধান, রাজশাহী মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ যারা এই প্রক্রিয়াটা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন, আমরা রাজশাহীবাসী তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। রাজশাহী অঞ্চলের অসংখ্য রোগী এই ট্রেনে স্বস্তির সঙ্গে চিকিৎসার জন্য ভারতে যেতে পারবে। তাদের জন্য এই ট্রেন যে কতটা উপকারে আসবে, সেটা বলে বোঝানো কঠিন। ট্রেনটি চালুর সিদ্ধান্তে আমরা খুব খুশি।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কিংবা যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে যেতে হলে রাজশাহী থেকে খুলনাগামী ট্রেনে উঠতে হয়। সে ট্রেনে টিকিট পাওয়া যায় না ভারতগামী মানুষের ভিড়ে। নতুন ট্রেন সরাসরি কলকাতা পর্যন্ত চলবে বলে অনেক উপকার হবে। রোগীদের উপকার তো হবেই, এর সঙ্গে দুই দেশের ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হবে। বিশেষ করে স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানিকারকেরা সহজে যাতায়াত করতে পারবেন। ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়বে। ভারতের সঙ্গে যত বেশি যোগাযোগ সহজ হবে, তত বেশি এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন হবে। রাসিক মেয়র ট্রেন চালুর জন্য অনেক দৌড়ঝাঁপ করেছেন বিভিন্ন দফতরে। আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ।
এই ট্রেন চলাচলের ফলে পর্যটনেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন পর্যটকদের সংগঠন রাজশাহী ট্যুর ম্যুরল্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ডা. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, চিকিৎসা, আত্মীয়তা, ব্যবসা ও পর্যটন- এই চার কারণে ভারতে যেতে হয়। রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন চালু হবে শুনে আমরা যারা ভ্রমণ পছন্দ করি, তারাও অনেক খুশি। অচিরেই যেন এটি চালু হয়।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহী থেকে কলকাতা সরাসরি ট্রেন ও বিমান যোগাযোগ চালু করা আমার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতির মধ্যে অন্যতম একটি। এ পথে সরাসরি ট্রেন ও বিমান চালু করতে দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। অবশেষে সেই কাঙ্ক্ষিত ট্রেন যোগাযোগ চালু হতে যাচ্ছে। এই ট্রেন সার্ভিস চালু হলে রাজশাহী তথা উত্তরাঞ্চলের মানুষেরা ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে। ভবিষ্যতে রাজশাহী-কলকাতা সরাসরি বিমান চালুর ব্যাপারে আমি প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব।
রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন আরও বলেন, রাজশাহীর এখনকার বিমানবন্দর দিয়েই কলকাতার সঙ্গে প্যাসেঞ্জার বিমান চালানো সম্ভব। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য রাশিয়া থেকে ইউরেনিয়াম আনার জন্য এ বিমানবন্দর প্রস্তুত করা হবে। তখন এটি এমনিতেই আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হবে। কার্গো বিমান চালানো যাবে। ভারতের সঙ্গে ছোট-বড় সব ধরনের প্যাসেঞ্জার বিমানও চালানো যাবে।

Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *