সংবাদ শিরোনাম:

বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান—সবাই তাকিয়ে সবার দিকে

Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

ক্রীড়া ডেস্ক:

সুপার এইট নামটা তাহলে যথার্থই হয়েছে বলতে হবে। সব ম্যাচই ‘বড়’ ম্যাচ, প্রতিটি ম্যাচেরই অসীম গুরুত্ব। ‘মরা’ ম্যাচ বলতে কিছু নেই। এমনকি অন্তত যে একটা ম্যাচ শুধুই খেলার জন্য খেলা হবে বলে মনে হয়েছিল, সেই বাংলাদেশ-আফগানিস্তানও এখন তুমুল উত্তেজনার অন্য নাম। সুপার এইট আসলেই ‘সুপার’ হচ্ছে।
সাকিব আল হাসানের সংবাদ সম্মেলনে ওই প্রশ্নটা করেছিলেন যে বিদেশি সাংবাদিক, তাঁর কাছে তো ক্ষমা চাইতে হবে দেখছি। যদিও তাঁর প্রশ্ন শুনে হেসে দেওয়াটাই ছিল তখন স্বাভাবিক। সাকিব হয়তো হাসেননি। তবে অবাক তো হয়েছেনই। সুপার এইটে টানা দুই ম্যাচে হেরে বাংলাদেশ ‘বিদায়’ নিয়েছে, আর ওই সাংবাদিক কিনা প্রশ্ন করছেন বাংলাদেশের সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনা নিয়ে! সাকিব খুব দ্রুতই প্রসঙ্গটা শেষ করে দিলেন এই বলে, ‘আমার মনে হয় না আর কোনো সুযোগ আছে।’
তখন কে জানত, সেই রাতেই আফগানিস্তান বিশ্বকাপকে এমন জমিয়ে তুলবে! খুলে দেবে বাংলাদেশের জন্যও সম্ভাবনার দুয়ার। এটা অবশ্য একটু বেশি বলা হয়ে গেল। সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেছে কোথায়; বরং বলতে পারেন, বাংলাদেশের সেমিফাইনালে ওঠার দুয়ারে এখন আর খিল দেওয়া নেই। ধাক্কা দিলে তা খুলেও যেতে পারে।
সমস্যা হলো, শুধু বাংলাদেশ ধাক্কা দিলেই তো হচ্ছে না। আরও অনেক দিক থেকে ধাক্কাধাক্কি লাগবে। প্রথম কথা, বাংলাদেশকে জিততে হবে, হারতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে। শুধু তাতেই হবে না। কোথায় যেন একটা হিসাব দেখলাম, বাংলাদেশ ৩১ রানে জিতলে নেট রান রেটে আফগানিস্তানকে পেছনে ফেলতে পারবে। কিন্তু পেছনে ফেলতে হবে অস্ট্রেলিয়াকেও। সেটা তো আর বাংলাদেশের হাতে নেই। সেই কাজটা করতে হবে ভারতকে। অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে হবে কমপক্ষে ৫৫ রানে।
এত জটিল হিসাব-নিকাশ বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচের আগেই অবশ্য সরল হয়ে আসবে। সেন্ট লুসিয়ায় সোমবারের সকাল আর বাংলাদেশের রাতে ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ পুনর্নির্ধারণ করে দেবে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচের গুরুত্ব। মানে, ওই ম্যাচে শুধু আফগানিস্তানেরই সেমিফাইনাল খেলার সুযোগ থাকবে, নাকি বাংলাদেশও নামতে পারবে ক্ষীণ আশা নিয়ে।
ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে মানসিকতা, সামর্থ্য, রণকৌশল—এসব নিয়ে অনেক প্রশ্ন তুলে দিয়ে বাংলাদেশ দল সেদিন বিকেলেই অ্যান্টিগা থেকে উড়ে গেছে সেন্ট ভিনসেন্টে। ৫০ রানে পরাজয় টি-টোয়েন্টিতে অনেক বড়। তার চেয়েও বড় হয়ে উঠছে, ভারত ১৯৬ রান করে ফেলার পর সেই অর্থে তা তাড়া করার কোনো দৃশ্যমান তৎপরতা না থাকা। যার মানে ভারত ২০০–এর কাছাকাছি করে ফেলার পর আপনি-আমি যেমন ম্যাচ শেষ বলে ধরে নিয়েছি, বাংলাদেশ দলও তা-ই। সাকিব তো স্বীকারই করলেন, ১৮০-১৯০ রানের টি-টোয়েন্টি এখনো বাংলাদেশের কাছে অবোধ্যই হয়ে আছে।
দিনের খেলায় টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং নেওয়া, নতুন বলে দুই স্পিনারকে দিয়ে বল করানো—প্রশ্ন এসব নিয়েও উঠেছে। যা নিয়ে ভিন্নমতের কথা জানিয়ে বাংলাদেশ দলের জন্য খুবই শান্তিপূর্ণ একটা বিশ্বকাপে একটু অশান্তির আভাসও দিয়ে গেলেন সাকিব। ক্রিকেট মাঠে এসব সিদ্ধান্ত অধিনায়কই নেন, যাতে কোচের মতামত অবশ্যই বড় ভূমিকা রাখে।
তবে এটাও তো সত্যি যে প্রায় সব দলেই অধিনায়ক, সহ-অধিনায়ক ও সিনিয়র দু–তিনজন খেলোয়াড়কে নিয়ে একটা লিডারশিপ গ্রুপ থাকে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা অবশ্যই অধিনায়কের, তবে এসব নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়। বাংলাদেশ দলেও একসময় এই লিডারশিপ গ্রুপ ছিল। সাকিব না বললে কেউ জানতেই পারতেন না যে এখন আর তা নেই। থাকলে সাকিব অবশ্যই সেটিতে থাকতেন। টসে জিতলে ফিল্ডিং বা দুই প্রান্তেই স্পিনের রণপরিকল্পনা সম্পর্কেও এমন অন্ধকারে থাকতেন না।
তা কী কারণ থাকতে পারে ওই সিদ্ধান্তের? প্রতিপক্ষকে চমকে দেওয়ার চেষ্টা ছাড়া আর কোনো কারণ তো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাঁহাতি পেসারদের বিপক্ষে একটু ঝামেলা আছে বলে নতুন বল হাতে মোস্তাফিজকে দেখার একটা মানসিক প্রস্তুতিও হয়তো নেওয়া ছিল ভারতীয় ওপেনারদের। এক প্রান্তে অফ স্পিনার, অন্য প্রান্তে বাঁহাতি স্পিনার নিশ্চয়ই তাঁদের কল্পনাতেও আসেনি। সুপার এইট শুরুর আগেই চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বলেছিলেন, অস্ট্রেলিয়া-ভারত এত ভালো দল যে তাদের হারাতে বাংলাদেশকে অপ্রথাগত কিছু ভাবতে হবে। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে রিশাদকে ওপরে তুলে দিয়ে তা করা হয়েছে। ভারতের বিপক্ষে স্পিন–যুগল দিয়ে আক্রমণ শুরু করেও। বলাই বাহুল্য, কোনোটাই কাজে আসেনি।
চন্ডিকা হাথুরুসিংহে যে সুপার এইটে উঠেই সন্তুষ্ট থাকার কথা বলেছেন, সেটাও সাকিব এদিন সংবাদ সম্মেলনে এসেই প্রথম জেনেছেন। কোচের ওই কথাটা বলার পেছনে যে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে, তা বুঝতে অবশ্য তাঁর একটুও সমস্যা হয়নি। বরং দলের আবহে সেমিফাইনালের একটা স্বপ্ন ছিল বলেই সাকিবের দাবি। সেই স্বপ্ন যে শেষ ম্যাচে নামার সময়ও থাকতে পারে, এটা তিনি ভাবেননি। কেউই নয়।
ভারতের বিপক্ষে আজ অস্ট্রেলিয়া জিতে গেলে অবশ্য মাঠে নামার আগেই বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক বিদায়। আর অস্ট্রেলিয়া বড় ব্যবধানে হারলে বাংলাদেশ-আফগানিস্তানও তখন হয়ে উঠবে ‘ব্লকবাস্টার’। তা কাভার করার জন্য বাংলাদেশের কোনো সাংবাদিক সেন্ট ভিনসেন্টে থাকবেন না। অ্যান্টিগা পর্যন্ত আসা বাংলাদেশের ১৩–১৪ জন সাংবাদিকের অনেকেই হন্যে হয়ে অ্যান্টিগা থেকে সেন্ট ভিনসেন্টের টিকিট খুঁজেছেন। তা না পেয়ে সান্ত্বনা খুঁজেছেন, অর্থহীন এই ম্যাচ কাভার না করলেই–বা কী!
অর্থ দাঁড়িয়ে গেলেও এখন আর কিছু করার নেই। বাংলাদেশের সেমিফাইনালে ওঠার কাগুজে সম্ভাবনা নিয়ে শুরু হোক বা না হোক, এই ম্যাচে একটা ‘রেকর্ড’ কিন্তু হচ্ছেই। এই প্রথম বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ দল, যেখানে বাংলাদেশের কোনো সাংবাদিক থাকবেন না!

Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *