সংবাদ শিরোনাম:

ফ্রান্সের কোম্পানি বকেয়া পরিশোধ না করে দেশি শ্রমিকদের বহিষ্কারের হুমকি

Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

তাইজুল ইসলাম সবুজ:

ফ্রান্সের বহুজাতিক কোম্পানী টোটাল এনার্জিসের বাংলাদেশ ভিত্তিত প্রতিষ্ঠান টোটাল এলপি গ্যাস লিমিটেডের প্রিমিয়ার এলপি গ্যাস লিঃ (টোটাল বাংলাদেশ) চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড কুমিরা এলপিজি টার্মিনালের সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিকদের বিগত ১০/১৫ বছর যাবৎ তাদের ন্যায়্য অধিকার থেকে অবৈধ উপায়ে বঞ্চিত করে আসছে টোটাল বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকরা সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত হলের তাদেরকে স্থায়ী নিয়োগপত্র ও ছবিসহ পরিচয়পত্র প্রদান পূর্বক শ্রম আইন অনুযায়ী স্থায়ী শ্রমিকের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধাসহ বাৎসরিক অর্জিত ছুটির বকেয়া পরিশোধ না করে শ্রমিকদের ইনসেনটিভ থেকে অবৈধ উপায়ে কমিশন কেটে নেয়া হচ্ছে। শ্রমিকরা প্রতিবাদ জানালে তাদেরকে শাররিক নির্যাতন করা সহ চাকুরী থেকে বহিস্কার করার হুমকি প্রদান করা হয়। এব্যাপারে ন্যায় বিচার পেতে প্রধানমন্ত্রী সহ মন্ত্রী পরিষদ সচীব, জননিরাপত্তা বিভাগ, সংসদ সদস্য সীতাকুণ্ড, ওএসকে গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম,জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম, টার্মিনাল ইনচার্জ-প্রিমিয়ার এলপি গ্যাস লিঃ (টোটাল বাংলাদেশ) চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠানে ডিজি ও নিন্মতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছে ন্যায্য অধিকার বঞ্চিত সকল শ্রমিকদের পক্ষে শ্রমিক আব্দুল হামিদ।
অভিযোগকারী আব্দুল হামিদ বলেন, আমরা ৬২ জন শ্রমিক ১০/১৫ বছর যাবৎ চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার এলপি গ্যাস লিঃ (টোটাল বাংলাদেশ), এলপিজি টার্মিনালে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে অত্যন্ত সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, বিশ্বস্ততা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমরা কখনো প্রিমিয়ার এলপি গ্যাস লিঃ কর্তৃপক্ষের অবাধ্য হয় নাই, প্রতিষ্ঠানের কোনো প্রকার ক্ষতিসাধন করি নাই, এমনকি নিয়ম- শৃঙ্খলা পরিপন্থি কোনো কর্মকাণ্ডের সহিত সম্পৃক্ত হয় নাই। ফলে দীর্ঘ চাকুরিকালীন সময়ে আমাদের সার্ভিস রেকর্ড অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন।
চাকুরীতে নিয়োগ অনুযায়ী ১৯৬৫ খ্রিঃ সালের শ্রমিক নিয়োগ (স্থায়ী আদেশ) আইনের ০২ (ভি) ধারা ও ১৯৬৯ খ্রিঃ সালের শিল্প সম্পর্ক অধ্যাদেশের ০২ ধারায় ন্যায় ২০০৬ খিঃ সালের বাংলাদশে শ্রম আইনের ০২ (৬৫) ও ১৭৫ ধারা অনুযায়ী আমরা শ্রমিক সংজ্ঞাভূক্ত অর্থাৎ ম্যানুয়েল ওয়ার্কার। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো, আমরা বারংবার মৌখিক আবেদন জানালেও আইনানুগ পন্থায় আমাদের চাকুরিতে স্থায়ী নিয়োগপত্র ও ছবিসহ পরিচয়পত্র প্রদান করা হয় নাই। তবে মৌখিকভাবে আমাদেরকে বলা হয়েছে আমরা স্থায়ী শ্রমিক। কিন্তু নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র প্রদান করা হয় নাই। আইনমতে সার্ভিস বহি সহ প্রভিডেন্ট ফান্ড চালু করা হয় নাই, বাৎসরিক অর্জিত ছুটির পাওনা কখনই নগদীকরণ করা হয় নাই, ইহা ছাড়াও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে, ২ ঈদের বোনাস দেয়া হয় নাই। শ্রম আইন স্বীকৃত বাৎসরিক কোনো প্রকার ছুটি দেওয়া হয় না। যোগ্যতার ভিত্তিতে কোনো প্রকার বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট প্রদান করা হয় না। যার কারণে আমাদের পরিবারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কর্তৃপক্ষ আমাদের যেই পরিচয়পত্র প্রদান করেছেন, ইহা কোনো অবস্থাতেই স্থায়ী শ্রমিকের পরিচয়পত্র হতে পারেনা। তবে প্রদত্ত পরিচয়পত্রে কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত চতুরতার আশ্রয় নিয়ে আমাদেরকে ক্যাজুয়াল শ্রমিক হিসেবে গন্য করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ শ্রম আইনের ৪(৮) ধারা অনুসারে চাকুরীতে যোগদানের ৩ মাস অন্তর স্বাভাবিক নিয়মেই চাকুরী স্থায়ী/কনফার্ম হয়ে যায়। উক্ত ধারায় বলা হয়েছে যে, স্থায়ী নিয়োগপত্র দেয়া না হলেও ৩ মাস অন্তর বর্ণিত বিধান অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট শ্রমিকের চাকুরী স্থায়ী বলিয়া গণ্য হইবে। এবিষয়ে মহামান্য উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত রয়েছে।
শ্রমিকরা বলেন, আমরা স্থায়ী পদের বিপরীতে চাকুরীরত আছি, আমাদেরকে সঠিক নিয়মে বেতন-ভাতা দেয়া হচ্ছে না। স্থায়ী নিয়োগপত্র ও ছবিসহ পরিচয় প্রদান পূর্বক আইনমতে আমাদের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধাদি এবং বাৎসরিক অর্জিত ছুটির বকেয়া সহ যাবতীয় বকেয়া পাওনাদি এরিয়াল হিসেবে প্রদান করার আহ্বান জানাচ্ছি।
এদিকে বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাখিলকৃত অভিযোগসুত্রে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর বরাবর চিঠি প্রেরণ করলে অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে তদন্তের জন্য প্রিমিয়ার এলপি গ্যাস লিমিটেড (টোটাল বাংলাদেশ) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও শ্রমিকপক্ষকে আগামী ৯জুলাই২০২৪ তারিখে সহ প্রমানাদি নিয়ে তাদের কাজ কার্যালয়ে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ প্রদান করেছে।
প্রিমিয়ার এলপি গ্যাস লিমিটেড (টোটাল বাংলাদেশ) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএস কৃষাণ এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। এছাড়া টোটাল গ্যাস কুমিরা টার্মিনাল হেড অফ সাপ্লাই এন্ড লজিস্টিক আহমেদ মনির উদ্দিন এর মুঠোফোনে বারবার ফোন দিয়ে ও খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোন প্রকার সাড়া পাওয়া যায়নি।

Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *