নিজস্ব প্রতিনিধি:
‘গরমে ছেলেমেয়েগুলো নাস্তানাবুদ হয়ে গেছে। ভাবলাম এক বা দেড় টনের একটা এসি হলে সবাই অনন্ত একটু শান্তিতে থাকতাম। সত্যি বলতে নতুন এসি কেনার সামর্থ্য আমার নেই। তাই এখানে রিকন্ডিশন্ড এসি কিনতে এসেছি। মোটামুটি সাশ্রয়ী মূল্যে এখানে এসি কেনা যাচ্ছে। দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ড অনুযায়ী একেক এসির একেক দাম।’
এভাবে কথাগুলো বলছেন বারিধারায় এবি রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস দোকানে রিকন্ডিশন্ড এসি কিনতে আসা আবুল কালাম আজাদ নামের এক ক্রেতা।
কত টাকা দিয়ে এসি কিনেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এখানে এক-দেড় টনের এসি ১৫ হাজার টাকা দিয়েও পাওয়া যায়। কিন্তু সেটা কতটুকু ভালো হবে তা নিয়ে সংশয় আছে। আমি দেখে ভালো করে বুঝে ২৩ হাজার টাকা দিয়ে একটা হায়ার কোম্পানির এসি কিনেছি। সেটা বেশি দিন ব্যবহার করা হয়নি। এ জন্য দাম একটু বেশি নিয়েছে।
প্রচণ্ড দাবদাহে যখন জনজীবন অতিষ্ঠ, তখন গরমের তীব্রতা থেকে স্বস্তি পেতে নানা উপায় খুঁজছে মানুষ। তবে উচ্চবিত্তরা গরমে স্বস্তি পেতে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) ব্যবহার করলেও, মধ্যবিত্তদের কাছে বিলাসবহুল এই যন্ত্র অনেকটাই সাধ্যের বাইরে। দেশের বাজারে যখন এক টনের এসির দাম ৬০ হাজার এবং দেড় টনের এসির দাম ৭০ হাজার টাকা। তাই মানুষ ঝুঁকেছে রিকন্ডিশন এসির দিকে।
গরম থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ বারিধারা, ধোলাইখাল, যাত্রাবাড়ীর বিভিন্ন দোকানে ঘুরছেন রিকন্ডিশন এসি কিনতে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এক থেকে পাঁচ টনের এসি পাওয়া যাচ্ছে এখানকার দোকানগুলোয়। এ ছাড়া বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস মার্কেটেও রিকন্ডিশন্ড এসি বিক্রি হচ্ছে। যার দাম শুরু হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্য দিয়ে।
নবাবপুর থেকে যাত্রাবাড়ীর মেসার্স আব্দুর রহিম ইলেকট্রনিকস দোকানে এসেছেন শাহাদাত হোসেন। বেসরকারি এই চাকুরে জানান, পরিবারের জন্য এসি কিনতে এক দোকান থেকে আরেক দোকান ঘুরছেন। শুরুতে নতুন এসির দোকানে গিয়েছিলেন। দাম বেশি হওয়ায় এখন তার নজর রিকন্ডিশন্ড এসির দিকে। তিনি জানান, রিকন্ডিশন্ড এসির দোকানগুলোতেও ভালো মানের এসি আছে। ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে এসব এসি কেনা সম্ভব।
যাত্রাবাড়ীর রিকন্ডিশন্ড এসি বিক্রেতা মনির হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা সারা বছর মানুষের বাসাবাড়ি বা বিভিন্ন অফিসে এসি ওয়াশ ও মেরামতের কাজ করি। তবে এখন বিক্রির কাজটাই বেশি করছি। কারণ এসি অফিস, বাসা, রেস্টুরেন্ট ও অ্যাম্বাসিগুলো থেকে সংগ্রহ করি। পরে এগুলো বিভিন্ন দামে বিক্রি করি। সারা বছর রিকন্ডিশন্ড এসির চাহিদা তেমন একটা না থাকলেও এপ্রিল, মে ও জুন মাসে রিকন্ডিশন্ড এসি সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়।
তিনি আরও বলেন, দেড় টনের গ্রি এসি তারা বিক্রি করছি ২৮ হাজার টাকায়। দুই টনের বাটারফ্লাই এসি ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকায়। এক টনের মিনিস্টার এসি বিক্রি করছি ১৬ হাজার টাকায়। হায়ার দেড় টনের ইনভাটর এসি বিক্রি করি ২৮ হাজার টাকায়। মার্কেটে যে এসিগুলার দাম ৬০ থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে আছে, সেগুলো আমরা তিন ভাগের এক ভাগ দামে বিক্রি করছি।
শুধু বাসাবাড়ি নয়, অফিস-রেস্টুরেন্টের জন্য রিকন্ডিশন্ড এসি ক্রেতারা নিয়ে থাকেন বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। তবে বাসাবাড়িতে ব্যবহারের জন্য এক থেকে দেড় টনের এসির চাহিদা বেশি বলে জানাচ্ছেন তারা।
রিকন্ডিশন্ড এসি বিক্রির সুবিধার্থে এবং ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে এসব এসি বিক্রিতে বিক্রয়োত্তর সেবার ব্যবস্থাও রাখছেন বিক্রেতারা। তারা বলছেন, আমরা এসি বিক্রির পর তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত, কোনও কোনও ক্ষেত্রে এক বছর পর্যন্ত বিক্রয়োত্তর সেবার ব্যবস্থা রেখেছি। তারপরও কোন এসিতে কী ধরনের সমস্যা ছিল, আমরা রিপেয়ার করে সেটা ক্রেতাদের জানিয়ে দিই। এ ক্ষেত্রে ক্রেতারা জেনে-শুনে-বুঝে এসি কিনে থাকেন।
এসির মতো ইলেকট্রনিকস সামগ্রী থেকে যেকোনও সময় ঘটে যেতে পারে বড় কোনও দুর্ঘটনা। তাই রিকন্ডিশন্ড এসি কেনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ ও ব্যবহারবিধি বলে দেন বিক্রেতারা।
ফয়েজ উদ্দিন নামের এক বিক্রেতা বলেন, আমরা বিভিন্ন অফিস-আদালত থেকে যেসব এসি সংগ্রহ করি, সেগুলো ভালো থাকে। আবার যারা বাসাবাড়ি শিফট করে বিদেশ চলে যায়, সে ক্ষেত্রেও সেগুলো ভালো থাকে। আবার অনেকে এসিতে সমস্যা দেখা দিলে বিক্রি করে দেয়। আমরা সব এসির ক্ষেত্রে নিজেরা আগে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করি যে এসিতে কোনও ধরনের সমস্যা আছে কি না। কারণ জেনেশুনে আমরা তো কারও ক্ষতি করতে পারি না।
দিন শেষে আমাদের কাছ থেকে যারা এসে কেনে, আমরা তাদেরই সার্ভিস দিয়ে থাকি। এ ক্ষেত্রে তারা যদি কোনও সমস্যায় পড়ে, তাহলে তো আমাদের দায়ভার নিতে হবে।
ঝুঁকি থেকে বাঁচার উপায়:
ব্যবহারবিধি মেনে না চললে রিকন্ডিশন্ড এসিতে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ জন্য এসি ব্যবহারে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এসির নিরাপত্তায় বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তারা বলছেন, ঝুঁকি থেকে বাঁচার উপায় আছে। বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কারিগরি কর্মকর্তা ও এসি মেরামতকারীরা কেনার আগে ও ব্যবহারের সময় কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। মনে রাখতে হবে, এসি একটি যন্ত্র। এ যন্ত্রেরও যত্নের প্রয়োজন আছে। তাই নিয়মিত পরিষ্কার রাখাসহ রক্ষণাবেক্ষণের দিকে নজর বাড়াতে হবে।
রিকন্ডিশন্ড এসি কেনার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় খেয়াল করা জরুরি:
১. দাম একটু বেশি হলেও সুপরিচিত ব্র্যান্ডের এসি কিনতে হবে। এ ক্ষেত্রে সেই ব্র্যান্ডের কিছুটা হলেও সুবিধা পাওয়া যাবে।
২. বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) মানচিহ্ন আছে কি না, তা নিশ্চিত হয়ে নেওয়া উচিত।
৩. ঘরের আকার অনুযায়ী এসি কিনতে হবে। টাকা বাঁচাতে বড় কক্ষের জন্য কম ক্ষমতার এসি কিনবেন না।
৪. বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ও আধুনিক প্রযুক্তির এসি কিনুন। এতে বিদ্যুৎ খরচ কমবে।
৫. পেশাদার টেকনিশিয়ানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে।
৬. রিকন্ডিশন্ড এসি কেনার ক্ষেত্রে এসিতে কোনও সমস্যা আছে কি না, তা বিক্রেতার কাছ থেকে নিশ্চিত হতে হবে।