সংবাদ শিরোনাম:

জন্মতিথির নব বসন্তে সর্বজয়ী মহানায়ক

Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

ক্রীড়া ডেস্ক:

কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে লুসাইল স্টেডিয়ামের প্রেস বক্স থেকে ভেসে এসেছিল, ‘লিওনেল মেসি হ্যাজ শেকেন হ্যান্ডস উইথ প্যারাডাইস’। ধারাভাষ্যের মেসি খ্যাত পিটার ড্রুরির কণ্ঠে এই উক্তির পরই জানা হয়ে গিয়েছিল, আর্জেন্টিনার রোজারিও থেকে উঠে আসা ছেলেটা সর্বজয়ী হয়ে উঠেছেন। আর্জেন্টাইনদের ৩৬ বছরের আক্ষেপ মোচন করা সেই মেসি এবার ৩৬ পেরিয়ে পা দিয়েছেন নব বসন্তে, সাইত্রিশের ঘরে।
১৯৮৭ সালে ২৪ জুন আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে মেসির জন্ম। বাবা জর্জ মেসি ও মা সেলিয়া কুচেত্তিনির তৃতীয় সন্তান মেসি। জন্মের ১০ বছর পর কঠিন এক রোগে আক্রান্ত হন ছোটখাটো গড়নের ছেলেটা। শরীরে দেখা দেয় গ্রোথ হরমোনজনিত জটিলতা। মেসির পরিবারের চিকিৎসা করার সামর্থ্য না থাকায় হাত বাড়িয়ে দেয় স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা।
মেসির প্রতিভা দেখে তাকে নিজেদের করে নেয় বার্সেলোনা। লা মাসিয়ার সবুজ গালিচা থেকেই সর্বজয়ী হওয়ার শুরু। ২০০৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে বার্সেলোনা মূল স্কোয়াডে সুযোগ পান মেসি। এরপরের গল্পটা সবার জানা। ক্যাম্প ন্যু থেকে সান্তিয়াগো বার্নাব্যু অথবা স্তদিও দি ফ্রান্স থেকে ওয়েম্বলির সবুজে ছোট্ট দুটি পায়ে মেসি রচনা করেছেন অজস্র মহাকাব্য। রূপকথার ঝুলিতে বন্দি হয়েছে অসংখ্য স্বপ্নের রাত।
এরপরের সময়টায় বয়স যত গড়িয়েছে, মেসির অর্জনের পাল্লা হয়েছে ভারী। জন্মদিন আসে-যায়, মেসি দ্রুপদি ছন্দ ছড়িয়ে হয়ে ওঠেন সাফল্যের রাজপুত্র। ২০০৫ সালে ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে শিরোপা জিতিয়ে শুরু। এরপর ২০০৮ সালে আর্জেন্টিনাকে এনে দিলেন অলিম্পিকের স্বর্ণ।
২০১০ বিশ্বকাপে গুরু-শিষ্য হয়ে জুটি বেঁধেছিলেন ম্যারাডোনার সঙ্গে। তবে সফল হতে পারেননি। শুরুটা ভালো হলেও কোয়ার্টার ফাইনালে স্বপ্নের সলিল সমাধি। তবে বার্সেলোনার হয়ে জাদুকরী পারফর্ম্যান্স তাকে এনে দিয়েছে টানা চার ব্যালন ডি’অর। কিন্তু বিশ্বকাপ আসতেই আবারও হোঁচট। এবার ২০১৪ সালে ফাইনালে হারলেন জার্মানির কাছে।
বিশ্বকাপ হাতছাড়া হবার পর কোপা আমেরিকার টানা দুই শিরোপা হাতছাড়া, হতাশায় অনেকটাই ভেঙে পড়েন মেসি। ক্লাবের জন্যই মেসি, জাতীয় দলের জন্য না, এমন দুয়োধ্বনিতে নিজেকে সরিয়ে নিলেন জাতীয় দল থেকে। কিন্তু মেসি তো হাল ছাড়বার পাত্র নন। নতুন এক দল নিয়ে আবারও নামলেন লড়াইয়ে। ভাঙা তরী মেরামত করে নামলেন উত্তাল সমুদ্রে।
আক্ষেপটা পূরণ হয় ২০২১ সালে কোপা আমেরিকায়। ১৬ বছর পর জাতীয় দলের হয়ে মেসির শিরোপা জয়ের আক্ষেপ মেটে। কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে জেতা শিরোপাটা যেনো তার প্রাপ্যই ছিলো। এরপর ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপে দলকে স্বর্ণের ট্রফিতে মুড়িয়ে মেসি চড়ে বসলেন স্বর্গের সিংহাসনে। পেয়ে গেলেন অমরত্ব।
বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ, আর্জেন্টিনার হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল, ভিন্ন পাঁচ বিশ্বকাপে অ্যাসিস্ট, বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ ম্যাচ, সবচেয়ে বেশি মিনিট খেলা, সবচেয়ে বেশি গোল অবদানে মেসি একাই নিজের করে নেন কাতার বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপে ছুঁয়ে ফেলেছেন পেলেকে, গোল করেছেন সমান ১২টি। করিয়েছেন সমান আট গোলও।
মেসি নিজের ৩৬তম জন্মদিনটা রাঙিয়েছেন একরাশ প্রাপ্তি আর অর্জনে। সময়ের ক্রমে আরেকটি কোপা আমেরিকার লড়াই চলাকালে পা দিলেন সাইত্রিশে। নব বসন্তের গল্পে কি আরেকটি সাফল্য তবে আসতে যাচ্ছে? সেটা না আসলেও অমরত্ব তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে যাবে জীবনের অবশিষ্ট বসন্তের ভাঁজে ভাঁজে।

Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *