নিজস্ব প্রতিনিধি:
সারা দেশে চলছে তীব্র দাবদাহ। প্রকৃতি উত্তপ্ত থেকে উত্তপ্ততর হয়ে উঠছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিঘ্নিত হচ্ছে মানুষের সাধারণ চলাচলও। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে চলাচল কমে গেছে। ইতোমধ্যে সরকার সব স্কুল-কলেজ এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু এই তীব্র দাবদাহের মধ্যেই কাজের তাগিদে বের হয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এর মধ্যে রয়েছেন রাস্তার পাশে পণ্য বিক্রি করা হকাররা। চলমান দাবদাহ উপেক্ষা করেই আয়ের আশায় রাস্তার পাশে পসরা সাজিয়ে বসেছেন এই মানুষগুলো।
প্রচণ্ড রোদ ও গরমে হকাররা দোকান খুলে বসলেও দেখা মিলছে না ক্রেতার। কারণ তীব্র তাপপ্রবাহে প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। এতে আয় কমেছে রাস্তার পাশের বিক্রেতাদের। প্রকৃতির খরার সঙ্গে সহ্য করতে হচ্ছে আয়ের খরাও। বিক্রেতারা বলছেন, দিনের বেলায় তাদের বিক্রি কমেছে। বিকালের পর বিক্রি হয় কিছুটা, তবে তা যথেষ্ট নয়।
রবিবার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর পল্টন, গুলিস্তান, স্টেডিয়াম এলাকা ঘুরে দেখা যায় চলমান দাবদাহে পথের পাশে পণ্য নিয়ে বসা বিক্রেতাদের পরিস্থিতি। তাদের সঙ্গে কথাও হয় বর্তমান ব্যবসা পরিস্থিতি নিয়ে।
গুলিস্তানের ফুটপাতে বাচ্চাদের পোশাক বিক্রি করেন মারুফ হোসেন। তার ব্যবসার অবস্থা জানতে চাইলে বলেন, গরমে বেচাকেনা অনেক কমে গেছে। মানুষ তো ঘর থেকে মনে হয় বেরই হচ্ছে না। অবশ্য বের হবেই বা কেন, যে গরম পড়েছে। আমরা না বের হই পেটের তাগিদে, সবার তো আর আমাদের মতো অবস্থা না।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ছেলেদের পোশাক বিক্রি করেন মো. হারুন। তিনি বলেন, অন্যান্য সময়ের মতো বিক্রি হয় না। কাস্টমার নাই বললেই চলে। শেষ বিকালে কাস্টমার কিছুটা বাড়ে। তখন রোদ একটু কম থাকে। আবার অনেক অফিসে ছুটি হয় বিকালে, তখন বেচাকেনা কিছুটা বাড়ে।
রাস্তায় কাঠের চৌকি নিয়ে কাপড় বিক্রি করেন সজন। রোদ বেশি থাকায় চৌকির উপর ছাতা লাগিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার আগে ছাতা ছিল না। এখন রোদের কারণে ছাতা লাগিয়েছি। এতে আমি একটু ছায়া পাই, কাস্টমারও যেন এসে দাঁড়াতে পারেন। এখন ছাতার নিচে বসে আছি, কোনও কাস্টমার নেই।
রাস্তার পাশের এসব বিক্রেতাকে দেখা যায় কড়া রোদ থেকে বাঁচতে কাপড়, বড় ছাতা কিংবা প্লাস্টিকের পলিথিন উপরে বেঁধে ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন। আর যারা এসব করতে পারেনি তারা নিজের দোকান রেখে অন্য দোকানের ছায়ায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। বিক্রি না থাকায় অনেককেই দেখা গেছে আড্ডা দিয়ে সময় কাটাতে। আবার অনেক দোকান দুপুর পর্যন্ত বন্ধ থাকতে দেখা যায়। আশপাশের দোকানিরা জানান, গরমের কারণে তারা দেরিতে দোকান খুলেন।
কথা হয় পোশাক বিক্রেতা মনিরের সঙ্গে। বলেন, ‘আমি দোকান শুরু করি সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে। কিন্তু এখন শুরু করি সাড়ে বারোটা বা একটার দিকে। এই গরমে সকালে এসে লাভ নাই। কাস্টমার থাকলে আগে খুলতাম। কাস্টমারও তো নাই।’
বিক্রেতা আলতাফ বলেন, কাস্টমার নেই, আবার গরমও অনেক বেশি। তাই দেরি করে দোকান শুরু করি। আজকে এসেছি ১২টার দিকে। আগে ১০টার মধ্যে দোকান শুরু করতাম।
রোদ-বৃষ্টি যাই থাকুক, কাস্টমার পাবো এই আশায় থাকি। কারণ সংসার তো চালাতে হবে—বলছিলেন পোশাক বিক্রেতা গনি মিয়া।
হকার সবুজ বলেন, এই গরম অসহ্য। বৃষ্টি এলে কিছুটা শান্তি আসবে। গরম কমলে আমাদের কাস্টমারও বাড়বে—বলছিলেন বিক্রেতা শুক্কুর আলী।
তবে কবে এই দাবদাহ শেষ হয়ে বৃষ্টি নামবে, শীতল হবে নগরী—সেই প্রহন গুনছেন ফুটপাতের বিক্রেতারা।