মোঃ হাবিবুর রহমান:
কলেজে পড়ুয়া মো. হৃদয়কে সশস্ত্র কয়েকজন পুলিশ সদস্য ঘিরে রেখেছে। পোশাক ও হেলমেট পরিহিত কয়েকজন পুলিশ সদস্য আবার তা কে টানাহেঁচড়া করছে। কেউ চড় থাপ্পর মারছে। এরই মধ্যে সামনের দিক থেকে একজন পুলিশ সদস্য এসে হৃদয়ের পেটে অস্ত্র ঠেকিয়ে একটি গুলি করে। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ২০ বছরের হৃদয়। রাস্তার ওপর মরদেহ পড়ে থাকে তার। পরে পুলিশ সদস্যরা চারদিকে চলে যেতে থাকে। এমন দৃশ্যের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে। ভিডিওতে দেখা যায় পুলিশ প্রকাশ্যে হৃদয়ের পেটে গুলি করছে
গত ৫ আগস্ট পুলিশ সরাসরি গুলি করে হৃদয়কে মারার বিষয়টি স্পষ্ট হলেও আসামি করা হয় চার সাংবাদিককে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলার সময় গত ৫ আগস্ট বিকেলে গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ি থানা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মো.হৃদয় টাঙ্গাইলের গোপালপুর থানার উত্তর আলমনগর এলাকার মো. লাল মিয়ার ছেলে। টাঙ্গাইলের হেমনগর ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে লেখাপড়ার পাশাপাশি কোনাবাড়ি পারিজাত এলাকায় আপন ফুফাতো ভাই মো. ইব্রাহিমের সঙ্গে থাকতেন হৃদয়। কোনাবাড়ি-কাশিমপুর সড়কে তারা দুজনই অটোরিকশা চালাতেন। আন্দোলন চলার সময় একটি দোকান ঘরে আশ্রয় নেওয়া হৃদয়কে ধরে নিয়ে প্রকাশ্যে গুলি করে পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত হৃদয়ের ফুফাতো ভাই ইব্রাহিম বাদী হয়ে কোনাবাড়ি থানায় সোমবার (২৬ আগস্ট) রাতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় দৈনিক সমকালের কালিয়াকৈর প্রতিনিধি এম তুষারীসহ আরও ৪ সাংবাদিককে আসামি করায় তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, মামলার বাদী ইব্রাহিম ওই এলাকার না হওয়ায় তিনি কোনো আসামিকেই চেনেন না। তার সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি চক্র চার সাংবাদিকের নাম মামলায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন।
মামলায় সমকালের কালিয়াকৈর প্রতিনিধি এম তুষারী ছাড়াও আসামি করা হয়েছে বাংলা টিভির গাজীপুর প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম, সকালের সময়ের কোনাবাড়ি প্রতিনিধি মোখলেছুর রহমান, ভোরের ডাকের গাজীপুর প্রতিনিধি এম এম মমিন রানা,দৈনিক দেশ বার্তার জেলা প্রতিনিধি মো.কবির খান। এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হককে।
এছাড়া উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান, সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমসহ ৫৭ জন। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ২৫০- ৩০০ জনকে।
সমকালের কালিয়াকৈর প্রতিনিধি এম তুষারী বলেন, আমি কালিয়াকৈর প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছি, কোনাবাড়ি এলাকায় যাওয়ার প্রশ্নই উঠেনা। পূর্বে প্রকাশিত কোনো সংবাদের জের ধরে কেউ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে তার নামসহ অন্য সংবাদকর্মীদের নাম জড়িয়ে দিয়েছে।
গাজীপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পদাক রিপন শাহ বলেন, উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সাংবাদিকদের নাম মামলায় জড়ানো হয়েছে। দ্রুত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য মামলার বাদি ইব্রাহীমের মোবাইল ফোনে বারবার ফোন দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মো. জিয়াউল হক বলেন,হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ ছাড়া কোনো আসামিকে হয়রানি করা হবে না।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আহামারুজ্জামান বলেন, কেউ দায়ী না থাকলে তাকে গ্রেফতার করা হবে না। তদন্ত করে দায়ীদের গ্রেফতার করা হবে।