মোঃ ফারুক আহম্মেদ মোল্লা:
শরীয়তপুরে শুরু হয়েছে পদ্মার ভাঙ্গন। গত কয়েকদিন দেখা দিয়েছে পদ্মার বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙ্গন। এতে আতংকে দিন যাপন করছে কয়েকশ পরিবার জাজিরা ইউনিয়নের পাথালিয়া কান্দি। আর এই ভাঙ্গন ঠেকাতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা যায় , পদ্মার ভয়াবহ ভাঙ্গনে জাজিরা উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। পদ্মা নদীর দীর্ঘস্থায়ী ভাঙন রোধে ৮ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার নদীরক্ষা প্রকল্প হাতে নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ‘শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার পদ্মানদীর ডান তীরের ভাঙ্গন হতে মাঝিরঘাট জিরো পয়েন্ট এলাকা রক্ষা’ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৮৬০ কোটি টাকা।
এরপর ৩২টি প্যাকেজে ঠিকাদার নিয়োগ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড গত মে মাসের শেষের দিকে কাজ শুরু করে । ২০২৬ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
বর্তমানে বাঁধের আওতায় জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা, পালের চর, বড় কান্দি ও জাজিরা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় চলছে সিসি ব্লক স্থাপনসহ বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ। প্রকল্পটির কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করতে ১ হাজার ৩০০ শ্রমিক কাজ করছেন বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এরমধ্যে বর্ষা মৌসুম শুরু হলে পদ্মার পানি ও স্রোত বাড়তে থাকে। ফলে গত এক সপ্তাহ যাবৎ জাজিরা উপজেলার পাথালিয়া কান্দী সহ কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙ্গন শুরু হয়। এতে বেশকিছু ফসলি জমি ও গাছপালা নদীগর্ভে চলে যায়। এরই মধ্যে ভাঙ্গন ঠেকাতে কাজ শুরু করে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তারা বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে যাচ্ছেন। এতে করে আতঙ্কিত মানুষগুলোর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মজজ্ঞ দেখে তারা এখন আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন। প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার কথা জানিয়েছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পদ্মা নদীতে পানির উচ্চতা অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। সেই সাথে বেড়েছে স্রোতও তাইতো বেড়েছে ভাঙ্গন, ভাঙনের ফলে পাথালিয়াকান্দি এলাকার বেশ কিছু ফসলি জমি ও বসতবাড়ির জায়গা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রাকিব মোড়ল বলেন, ‘ কয়েকদিন আগেও বাড়ি থেকে নদী কিছুটা দূরে ছিল। কয়েক দিনের ভাঙ্গনে নদী এখন বাড়ির উঠানের কাছে চলে আইছে। তবে ভাঙ্গন ঠেকাতে যেভাবে কাজ শুরু হইছে তাতে আমরা খুশি।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বর্ণ হক বলেন, বর্ষা শুরু হলেই জাজিরায় পদ্মার ভাঙ্গন শুরু হয়। গত এক সপ্তাহে পাথালিয়াকান্দি সহ কয়েকটি এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই ভাঙ্গন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে আমরা ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং শুরু করেছি।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস. এম আহসান হাবীব জানান, জাজিরায় ৮৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮.৬৭ কিলোমিটার নদীর ডান তীর রক্ষা বাঁধের কাজ গত মে মাসে শুরু হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও বর্ষা মৌসুমে কিছু কিছু জায়গায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙ্গন ঠেকাতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।
এখন যেই যেই পয়েন্টে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে সেই সব পয়েন্টে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করাই আমাদের মূল লক্ষ। ভাঙ্গন ঠেকাতে ১৩শ শ্রমিক নিযুক্ত করা হয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত বিভিন্ন পয়েন্টে বালুভর্তি জিওব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ চালমান। আশা করছি পদ্মার ভাঙ্গন থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষা করতে পারবো।
এছাড়া প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এই অঞ্চলের মানুষ নদীভাঙন থেকে স্থায়ী ভাবে রক্ষা পাবে। পদ্মা পাড়ের মানুষের জীবনমান উন্নত হবে।পাশাপাশি দীর্ঘদিনের ভাঙ্গন কবলিত জনপদ পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে।